সন্ধানী ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট
১৯৭৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ (নতুন) এর ই ব্যাচের ছয়জন ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন, মোশাররফ হোসেন মুক্ত, মোঃ ইদ্রিস আলী মঞ্জু, মোঃ আব্দুল কাইউম, মোস্তফা সেলিমুল হাসনাইন ও খুরশীদ আহমেদ অপু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ”সন্ধানী” পরবর্তীতে কালের আবর্তনে সময়ের সাথে সাথে স্বীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে সেবা পরিমন্ডলের সুপরিচিত বিশাল মহীরুহে পরিণত হয়। সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী সন্ধানী স্বেচ্ছায় রক্তদান, মরণোত্তর চক্ষুদান, ড্রাগ ব্যাংক পরিচালনা, দূর্গত এলাকায় ত্রানকার্য পরিচালনা, ছাত্র কল্যাণ ইত্যাদি কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠালগ্নে সন্ধানীর প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ১৯৭৭ সালের প্রথম দিকে একদিন মোঃ ইদ্রিস আলী মঞ্জু প্রসঙ্গক্রমে জানতে পারেন যে তারই এক সহপাঠী অর্থনৈতিক প্রতিকুলতার কারণে সকালের নাস্তা না করে অভুক্ত অবস্থায় দুপুর দু’টা পর্যন্ত ক্লাশ করেন। অভুক্ত অবস্থায় সহপাঠীর চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিরেট পাষান বাক্যাবলী রপ্ত করার এ ব্যাপারটি তাকে ভীষন ভাবে নাড়া দেয়। তিনি ১৯৭৭ সালের ৫ই ফেব্র“য়ারী সকালে নাস্তার টেবিলে এ ব্যাপারটি তাঁর অন্য পাঁচজন সহপাঠীকে জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং পরিসল্পনা অনুযায়ী তাঁর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সম্মুখস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স এ্যানেক্স বিল্ডিং এর কড়ই গাছের নীচে একত্রিত হন এবং আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে তাঁরা ছয় জন ঐ সহপাঠীর সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করবেন এবং প্রতিমাসে একজন সাত টাকা এবং পাঁচজন পাঁচ টাকা করে প্রদান করবেন। তাঁদের প্রথম মাসের সংগ্রহ ছিল বত্রিশ টাকা। সে সময় ত্রিশ টাকায় পুরো মাসের সকালের নাস্তা হয়ে যেত। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, যেহেতু ঐ সহপাঠী তাদের নিকট থেকে নাস্তার টাকা নিতে চাইবেনা, সেহেতু টাকা সংগ্রহ করে মোঃ ইদ্রিস আলী মঞ্জুকে দেয়া হবে এবং তিনি ঐ ছেলেটিকে বুঝিয়ে টাকা হস্তান্তর করবেন।
এভাবে নামহীনভাবে সম্পুর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ১৯৭৭ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী যাত্রা শুরু করে সন্ধানী। প্রতিষ্ঠাতা ছয়জন তাঁদের কাজের সাংগঠনিক রূপ দেবার প্রয়োজনিয়তা অনুভব করে ১৯৭৭ সালের ১৯ শে মার্চ বিকাল ৫টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রত্যেকে সংগঠনের একটি করে নাম ঠিক করে একত্রিত হন এবং অনির্বাণ, আমরা ক’জন, ”সন্ধানী” এবং আরো কয়েকটি প্রস্তাবিত নামের মধ্যে থেকে মোশাররফ হোসেন মুক্ত এর প্রস্তাবিত ”সন্ধানী” নামটিকেই তাদের স্বপ্নের সংগঠনের জন্য মনোনীত করেন। কিছুদিন পর মোঃ ইদ্রিস আলী মঞ্জু এবং মোস্তফা সেলিমুল হাসনাইন সন্ধানীর জন্য একটি গঠনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ”সন্ধানী” নিয়মাবলী নামে চার পাতার একটি গঠনতন্ত্র তৈরী করেন। পরবর্তী সভায় সামান্য কিছু সংশোনী সহ মোঃ ইদ্রিস আলী মঞ্জুর হাতে লেখা ”সন্ধানী” নিয়মাবলী” কে সন্ধানীর প্রথম সংবিধানে উদ্দেশ্য হিসেবে লিখিত ছিল ” যাবতীয় অন্যায় অনাচার থেকে মুক্ত রেখে নিজেদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা এবং মানবতার কল্যাণের জন্য সাধ্যানুযায়ী সার্বিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। এভাবেই যাত্রা শুরু করে সন্ধানী, যা পরবর্তীতে তাঁদের যোগ্য উক্তরসুরীদের আন্তরিক ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তজাতিক পর্যায়ে বর্তমান অবস্থানে উপনিত হয়েছে। পরবর্তীতে সন্ধানী অন্যান্য মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে সন্ধানীর ইউনিট প্রতিষ্ঠা হবার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইউনিট প্রথম ইউনিট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে